জলাতঙ্ক ( Rabies )

You are currently viewing জলাতঙ্ক ( Rabies )

কারণ :

  • জলাতঙ্ক হলো ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের কারণে হয়।

ছড়ানোর মাধ‌্যম :

  • এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণি ও বন‌্য প্রাণিদের প্রথমে সংক্রমিত করে, মানুষ এই প্রাণিগুলির বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এই প্রাণিগুলি যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ‌্যে ছড়াতে পারে। মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ের মাধ‌্যমে বেশি আক্রান্ত হয়। এ রোগ মানুষ থেকে মানুষের অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ‌্যমে ছড়াতে পারে। যেহেতু বীর্য বা স্ত্রীযোনির তরলে ভাইরাস থাকতে পারে তাই তত্ত্বীয়ভাবে যৌনমিলনের মাধ‌্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে।

লক্ষণ :

  • প্রথমদিকে জ্বর, ক্ষুদামন্দা, কামড় স্থানের অনুভুতিতে পরিবর্তন যেমন- চিনচিন, ঝিনঝিন ইত‌্যাদি পরিলক্ষিত হয়।
  • কয়েকদিন পর থেকে তন্দ্রা, কনফিউশন, অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়।
  • ঢোক গিলার সময় ডায়াফ্রাম, রেসপিরেটোরি মাসল ও কণ্ঠনালির তীব্র ব‌্যথাযুক্ত সংকোচন হয়।
  • পানি পান করার চেষ্টা করলে ডায়াফ্রাম ও অন‌্যান‌্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব‌্যথা হয় ফলে রোগীর মধ‌্য হাইড্রোফোবিয়া বা পানিভীতি তৈরি হয়।
  • রোগীর ডিলিউসন, হ‌্যালুচিনেশন ও পাগলামি, শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ নাড়ানোর অক্ষমতা, চেতনাশূন‌্যতা দেখা দেয়।

রোগ নির্ণয় :

( ক )   সাধারণত রোগের ইতিহাস ও উপসর্গের উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে কর্নিয়াল

           ইম্প্রেশন স্মিয়ার ও স্কিন বায়োপসি থেকে র‌্যাপিড ইমিউনোফ্লুরেসেন্ট টেকনিকের মাধ‌্যমে

           অ‌্যান্টিজেন শনাক্ত করা সম্ভব।

চিকিৎসা :

সাধারণত জলাতঙ্ক রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এ রোগ একবার হলে মৃত‌্যু অনিবার্য। লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ‌্যেই রোগী মৃত‌্যুবরণ করে। কোনো অ‌্যান্টিভাইরাল ঔষধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। শুধু উপশমমূলক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। রেবিড প্রাণি কামড় দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধ‌্যে টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিরোগ :

এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কৃার হয়েছে, তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম‌্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ‌্যাকসিন (HDCV)। অন‌্যান‌্য টিকার মধ‌্যে উল্লেখযোগ‌্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ‌্যাকসিন (PCECV), ডাক ইমব্রিও সেল ভ‌্যাকসিন (DECV), নার্ভ টিস‌্যু ভ‌্যাকসিন (NTV) ইত‌্যাদি। ডাক সেল ভ‌্যাকসিনের ইমিউনোজেনেসিটি বা কার্যকারিতা কম এবং নার্ভ টিস‌্যু ভ‌্যাকসিন অ‌্যালর্জিক এনসেফালোমোয়েলাইটিস করতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে টিকা নেওয়াকে প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিস ও আক্রান্ত হওয়ার পরে টিকা নেওয়াকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিস বলে।

প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিস- পশুচিকিৎসক, চিড়িয়াখানার দেখাশোনাকারী, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোকজন বা যারা বাড়িতে কুকুর পোষে তাদেরকে প্রতিরোধমূলক হিসেবে এ টিকা দেওয়া হয়।

নিয়ম :  সাধারণত ৩টি ডোজ- ০, ৭ ও ২১ অথবা ২৮ তম দিনে ও প্রতিবছর বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।

পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিস- রেবিজ ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা অনেক বেশি হওয়ায় টিকা দেওয়ার পরে প্রতিরোধক ইমিউনিটি তৈরির জন‌্য পর্যাপ্ত সময় থাকে তাই এই ভ‌্যাকসিন পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিস হিসেবে নিয়মিত রূটিনমাফিক ব‌্যবহার করা হয়।

নিয়ম :  পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল‌্যাক্সিসের মধ‌্যে টিকা ও হিউম‌্যান রেবিজ ইমিউনোগ্লোবিউলিন     

             (RIG) উভয়ই অন্তর্ভূক্ত। হিউম‌্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ‌্যাকসিনের ৫টি ডোজ- ০, ৩, ৭, ১৪ ও

             ২৮ তম দিনে দেওয়া হয়। তবে ৯০ তম দিনে আরেকটি বুস্টার দেওয়া যেতে পারে। RIG

             শুধু একবার প্রথমদিকে দেওয়া হয়। এটি মূলত ক্ষতস্থানে বেশি দিতে হয়, বাকি অংশটুকু

              মাংসপেশিতে দিতে হয়।

https://rabiesalliane.org

https://www.thelancet.com/journals/lansea/article/PIIS2772-3682%2824%2900102-1/fulltext

Leave a Reply