মুরগির বাচ্চাকে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে তাপায়ন, লিটার ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানি পাত্রের সংকুলান সর্বোপরি আরামদায়ক ব্যবস্থাপনার নামই ব্রুডিং।

ব্রুডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রঃ
#বাল্ব
#থার্মোমিটার
#চিক গার্ড
#লিটার
#চিক ফিডার
#হোভার
#চিক ড্রিংকার
ব্রুডিং এর প্রস্তুতিঃ
মুরগির বাচ্চা তোলার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে ব্রুডার ঘরের মেঝে জীবাণু নাশক দ্বারা পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
পুরো ঘর চট বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে ফিউমিগেশন করে নিতে হবে। বাচ্চা আসার একদিন পূর্বে ঘরের চারপাশ চড় দিয়ে ঘেরাও করে দিতে হবে।
ফিউমিগেশন শুরুর পূর্বে বর্ডার ঘরের ভেতর নতুন লিটার খাদ্য ও পানির পাত্র ও বর্ডারের অন্যান্য যন্ত্র পাতি নিয়ে আসতে হবে।
১০০০ বয়লার অথবা লেয়ার বাচ্চা কে দুই ভাগ করে দুইটি আলাদা ব্যবস্থাপনা করাই উত্তম। অতঃপর ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় উঁচু চাটাই বা হার্ড বোর্ড দিয়ে চিক গার্ড তৈরি করে নিতে হবেঋ প্রতি ৩৫০-৪০০ বাচ্চার জন্য চিক গার্ডের উচ্চতা হবে দুই ফুট ও ব্যাস হবে ৯ ফুট (গরমকালে) ও ৮ ফুট (শীতকালে) বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আকার বাড়াতে হবে সাধারণত দুই সপ্তাহ পরে চিক গার্ড সরিয়ে ফেলা হয়।
মুরগিকে তাপ প্রদানের জন্য বৈদ্যুতিক বাল্ব হিটার, হ্যাজাক লাইট বা কেরোসিনের বাতির ব্যবহার করা হয়। তাপ যাতে উপরের দিকে বের হয়ে যেতে না পারে সেক্ষেত্রে টিন, কাঠ বা বাঁশের তৈরি হোভার ব্যবহার করতে হবে। হোভার সাধারণত উপরে থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ঘরে দুই ওয়াট করে তাপ প্রদান করতে হবে। বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পূর্বে ব্রুডার চালু রেখে প্রয়োজনীয় তাপ প্রদান করতে হবে। শীতকালে ব্রুডিং করার ক্ষেত্রে ব্রুডার এবং চিক গার্ড দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ব্রুডার ঘরের মেঝেতে পরপর লিটার বিছিয়ে তার ওপর পাতলা চট এবং খবরের কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে। দুই থেকে তিন দিন পর পর কাগজ পরিবর্তন করে ফেলতে হবে।
খাদ্য ও পানির পাত্র ব্যবস্থাপনাঃ
প্রথম এক দুই দিন কাগজের ওপর এবং পরবর্তীতে ফুট ট্রে, লিনিয়ার ফিডার অথবা ব্যাম্বু ফিডার, হপার টিউব ফিডার ইত্যাদিতে করে খাবার সরবরাহ করা হয়। চিত্রে ট্রে ও চিক ড্রিঙ্কার পর্যায়ক্রমে নিম্নরূপে সাজাতে হবে।

বাচ্চা আনার পর প্রথম আট ঘন্টা গ্লুকোজ স্যালাইন ৫০ গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। প্রথম চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত দৈনিক তিন থেকে চার বার খাবার দিতে হবে।
প্রথম অবস্থায় প্রতি ৫ বাচ্চার জন্য এক লিটারে ছয় থেকে আটটি ড্রিংকার দিতে হবে। ড্রিঙ্ককার অবশ্যই অর্ধপূর্ণ করে দিতে হবে তা না হলে বাচ্চা পানি নষ্ট করে ফেলতে পারে। প্রতিবার পানি দেওয়ার পূর্বে ডিঙ্কার ও পানি উভয় জীবাণু মুক্ত করে ফেলতে হবে। সে ক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে দেওয়া যেতে পারে।
*বয়স অনুযায়ী মুরগির খাদ্য ও পানির পাত্রের সংখ্যা এক হাজার বাচ্চার জন্য প্রথম সপ্তাহে ১০টি খাদ্য পাত্র ১০ টি পানির পাত্র, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩০ টি খাদ্য পাত্র ৩০টি পানির পাত্র, তৃতীয় থেকে উর্দ্ধে ৪০টি খাদ্য ৪০টি পানির পাত্র।
*বয়স অনুযায়ী মুরগীর খাদ্যে ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে মুরগির দৈনিক পুষ্টি চাহিদার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আকার আকৃতি এবং পুষ্টিমান সম্পন্ন ফিড তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল পেতে মুরগিকে তার বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধরনের খাদ্য প্রদান করা উচিত । ব্রয়লার স্টার্টার ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত মুরগির সম্ভাব্য ওজন ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত খাদ্যের নাম ক্রামবোল।
ব্রয়লার গ্রোয়ার দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ১১৫০ গ্রাম খাদ্যের নাম পিলেট।
ব্রয়লার ফিনিশার ২৫ দিন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত খাদ্য ১১৫০ গ্রাম থেকে যতটুকু খায় খাদ্যের নাম পিলেট।
ব্রয়লার মুরগিতে খাদ্য প্রদানে সতর্কতাঃ
ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে পাত্রে সার্বক্ষণিক খাদ্য থাকা উচিত। পাত্রের খাদ্য শেষ হবার আগে আবার খাদ্য প্রদান করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে খাদ্য একেবারে পাত্র পূর্ণ করে না দিয়ে পাত্রে কিছুটা খালি জায়গা রাখতে হবে। এতে খাদ্যের অপচয় কম হবে । চেষ্টা করতে হবে বারবার ফ্রেশ খাবার প্রদান করতে।

***মুরগির শেডে খাদ্যের পাত্র মুরগির পিঠ বরাবর উঁচুতে সেট করতে হবে মাত্র খুব বেশি ওষুধে সেট করলে মুরগির খাদ্য নাগাল না পেলে খাদ্য গ্রহণ কমে যেতে পারে পাশাপাশি খাদ্যের পাত্র খুব বেশি নিচেও সেট করা যাবে না এতে খাদ্যের অপচয় হতে পারে।
হুট করে মুরগির খাদ্য পরিবর্তন করা যাবে না ব্রয়লারের স্টার্টার থেকে গ্রোয়ার অথবা গ্রোয়ার ফিনিশার থেকে ফিনিশারে যাওয়ার আগে অবশ্যই তিন দিন খাদ্য মিক্সিং করে খাওয়াতে হবে।
খাদ্য পরিবর্তনের সময় পানির পাত্রের সাথে এনজাইম(Enzymes), ডাব্লুএস ভিটামিন(Water Soluble Vitamins)প্রোবায়োটিক(Probiotics )এবং মিনারেল(Minerals )খাওয়ালে বদহজমজনিত সমস্যা থাকবে না সেই সাথে মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চত হবে।
আলো ও তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনাঃ
ব্রুডারে বাচ্চা তোলার তিনদিন পর রাতে এক থেকে দুই ঘন্টা অন্ধকার করে রাখতে হবে যাতে বাচ্চাগুলি অন্ধকারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। দিনের বেলা আলাদাভাবে আলো প্রধানের কোন প্রয়োজন নেই। প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৯৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় দিয়ে শুরু করতে হবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা আগে দেখে নিতে হবে।
*প্রথম সপ্তাহে ৯৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৯০ ডিগ্রী ফারেহাইট, তৃতীয় সপ্তাহে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং চতুর্থ সপ্তাহ থেকে শেষ পর্যন্ত ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা মেইনটেইন করতে হবে।
*ব্রুডারে বাচ্চার অবস্থানই বুঝিয়ে দিবে ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রার ঠিক আছে কিনা সে ক্ষেত্রে বোঝার উপায় নিম্নরূপ

ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাপনাঃ
তাপমাত্রার সাথে সমন্বয় রেখে ঘরে বাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এর ওপর বাচ্চার বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার নির্ভর করে। তাপ উৎস থেকে সৃষ্ট কার্বন মনোঅক্সাইড ও পোল্ট্রি বিষ্ঠা থেকে সৃষ্ট এমোনিয়া গ্যাস ঘরে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং এতে করে বিষক্রিয়া হতে পারে ।
*পর্দার মাধ্যমে বায়ু চলাচল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন পর্দা নিচ থেকে ওপরের দিকে প্রয়োজন মত ওঠানামা করা যায়। বাতাসের দিকে যা উঠবে ঘরের উল্টা দিকে তার অর্ধেক উঠবে।
লিটার ব্যবস্থাপনাঃ
মুরগির বিছানা বা লিটার পোল্ট্রি খামারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সাধারণত এটি নির্ভর করে লিটার হিসেবে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি এবং এর সহজলভ্যতার ওপর।
লিটারের গুনাগুনঃ
#ওজনে হালকা ও দ্রুত পানি শোষণ ক্ষমতা
#সহজে বহন যোগ্য
#নরম ও আরামদায়ক
#সহজলভ্য ও দাম সাশ্রয়ী
#ছত্রাক ও পরজীবী মুক্ত
লিটার তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানঃ
তুষ সহজলভ্য ও লিটারের জন্য উৎকৃষ্ট উপাদান । অনেকে কাঠের গুড়া কে লিটার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে ব্রুডার নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া বর্তমানে বালি আখের ছোবরা, ছাই কিংবা পাতা দিয়েও লিটার প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
লিটার প্রস্তুতিঃ
লিটারের গুরুত্ব মৌসুম ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে । শীতকালে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি, গ্রীষ্মকালে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পুরো হয়ে থাকে।
লিটার প্রতি সপ্তাহে চালুনি দিয়ে চেলে অথবা রোদে দিয়ে উল্টে পাল্টে দিতে হবে । একই ব্যাচে শতকরা ১০-৫০ ভাগ পুরাতন লিটারের সঙ্গে নতুন লিটার যোগ করতে হবে।
লিটারের আদ্রতা কম থাকলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং আদ্রতা বেশি থাকলে লিটারে সাথে চুন বা ফসফেট মিশিয়ে নিতে হবে। আলো বাতাস দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
টিকাদান কর্মসূচিঃ
ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান পোল্ট্রি খামার ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টিকা প্রদানের পূর্বে দুই থেকে তিন ঘন্টা পানি খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে। ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টার মাঝে শেষ করতে হবে । কোন অবস্থায় অসুস্থ মুরগিকে ভ্যাকসিনেশন করানো যাবে না। ব্রয়লার মুরগিতে রোগ প্রতিরোধে নিম্নোক্ত টীকা কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।
*চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে চোখের রানীক্ষেত(New Castle Disease Vaccine), ১০ থেকে ১২দিনের মধ্যে খাবার পানিতে গামবোরো(Infectious Barsal Disease Vaccine), ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে খাবার পানিতে গামবোরো (Infectious Barsal Disease Vaccine) ২১ থেকে ২৩ দিনে খাবার পানিতে রানীক্ষেত(New Castle Disease Vaccine)।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে ও পরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য লাইসোজাইম(Lysozyme)ভিটামিন খাওয়ানো যেতে পারে।
